সেই বিষ্ময় বালকের নাম জোনাইদ মোল্লা (Junaid Mollah)। বয়স ১০ বছর। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামে। পিতার নাম ইমরান মোল্লা।
সূচী:
ছবিতে: মো: জোনাইদ মোল্লা
ছবি কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো ও কালের কন্ঠ
একনজরে জোনাইদ (Junaid Mollah):
পূর্ণ নাম | মো: জোনাইদ মোল্লা |
পিতার নাম | মো: ইমরান মোল্লা |
চাচার নাম | মো: ইউসুফ মোল্লা |
গ্রাম | পারইহাটি |
ইউনিয়ন | বাঁশবাড়িয়া |
উপজেলা | মুকসুদপুর |
জেলা | গোপালগঞ্জ |
বয়স | ১০-১২ বছর |
জোনাইদের দুরন্ত হয়ে ওঠার গল্প:
জোনাইদের পিতার নাম ইমরান মোল্লা। পেশায় একজন সবজী বিক্রেতা। মা গৃহীনি। মাত্র দেড় বছর বয়সে জোনাইদের (Junaid Mollah) বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। জোনাইদকে তার বাবা নিজে কাছে রেখে দেন। কিছুদিন পর পিতা ইমরান মোল্লা আবার বিয়ে করেন। জোনাইদ সৎমা ও দাদীর কাছে মানুষ হতে থাকে। ছোটবেলা থেকে মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্যই হয়ত জোনাইদের বাড়িতে মন টেকেনা। সে সুযোগ পেলেই হুট হাট এখানে সেখানে পালিয়ে চলে যায়। পৃথিবী তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। বের হবার আগে সে কখনো ভয়ও পায়না। সে যেন প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে চায়, হারিয়ে যেতে চায় অজানায়।
জোনাইদের পড়াশোনা:
স্বভাব সুলভ দুরন্ত হওয়ায় জোনাইদের (Junaid Mollah) পড়াশোনায় মন বসেনা। তার আর দশটা বাচ্চার মত সময়মত স্কুলে যেতে ভাল লাগেনা। কিন্তু পরিবার কি তাকে ছাড় দেয়। বাচ্চাকে তো পড়াশোনা শেখাতেই হবে। সেজন্য তাকে ভর্তি করা হয় আবাসিক মাদ্রাসায়। কিন্তু জোনাইদ সেখান থেকেও পালিয়ে যায়। এ যেন এক লাগাম ছাড়া ঘোড়া যে শুধু চরে বেড়াতে চায়।
আরো পড়ুন:
- তাইজুল ইসলাম: একজন প্রতিভাবান বাংলাদেশী ক্রিকেটার
- ইসকনের চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু: হিন্দু জাগরণ ও আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত
- ঢামেকের ভুয়া চিকিৎসক পাপিয়া আক্তার স্বর্ণা: এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা । papia akter sorna 2024
- বৈভব সূর্যবংশী: ভারতীয় ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা । Vaibhav Suryavanshi Rising star of Indian cricket
- নিঝুম মজুমদার-হারপিক মজুমদার কে ? কেন তাকে এই নামে ডাকা হয় ? Why is Nijhoom Majumder called Harpik Majumdar 2024?
জোনাইদের বিমানে চড়ার গল্প:
আকাশে বিমান উড়ে গেলে বাচ্চারা যেমন দৌড়ে দেখতে যায় জোনাইদও (Junaid Mollah) তেমন উড়ন্ত বিমান দেখে ভেবেছিল সে বিমানে চড়বে, বিমান চালাবে। তাকে চড়তেই হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। বাড়ি থেকে পালিয়ে সে প্রথমে মোংলায় যায়। সেখান থেকে তাকে বাড়ি পাঠানো হলে সে বাড়ি না গিয়ে পালিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে এসে নামে বিগত ১১ ই সেপ্টেস্বর রাত ০৩ টায়। তারপর কোন কিছু না ভেবেই সে বিমানবন্দরে ঢুকে পড়ে। প্রথমে সে এক হজ্জ্ব যাত্রীদের দলে সংযুক্ত হয়ে প্রথম নিরাপত্তা বেষ্টনী পার করে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ছোট বাচ্চা বলে কেও তাকে তেমন আটকায়নি। তারপর সে সেই হাজীদের সাথে এমন ভাবে থাকে যেন সে তাদেরই কেও একজন। যখন হাজীরা পাসপোর্ট বোর্ডিং পাসসহ ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে তখন সে তাদের সাথেই খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ও তাদের সাথেই ঢাকা-কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে চড়ে সিটে বসে পড়ে। সে মূলত তার স্বভাব সুলভ দুরন্তপনা থেকে এবং বিমানে ভ্রমণের লোভে বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারপর বিমানবালারা তার সন্দেহজনক আচরণ দেখে তাকে তার নিজ সিটে বসতে বলে। এরপর বিমানের কর্মীরা তার সাথে কে আছে, তার কাগজপত্র কোথায় জিজ্ঞাসা করলে সে ধরা পড়ে। তারপর তাকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে এবং পরে এয়ারপোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর তার বাড়ির সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং তার চাচা ইউসুফ মোল্লার কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
জোনাইদের বাড়ি যাবার পরের গল্প:
ছবি: জোনাইদের বাড়ি
চাচা ইউসুফ মোল্লা জোনাইদকে (Junaid Mollah) বিমানবন্দর থানা থেকে ছাড়িয়ে বাড়ি নিয়ে যান। উপজেলা শহর থেকে ইজিবাইকে করে তার বাড়ি যেতে হয়। বাড়িতে পৌঁছে ইজিবাইক থেকে চাচা বাড়িতে ঢুকলেও জোনাইদ বাড়িতে না ঢুকে আবার পালিয়ে যায়। তারপর প্রায় দুপুর ০১ টা নাগাদ তাকে গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ধরে আনা হয় এবং শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এরপর থেকে তাকে খুব সতর্ক পাহারায় রাখা হচ্ছে।
জোনাইদের স্বপ্নপূরণ:
ছবি কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো
জোনাইদের জন্য ঢাকা এয়ারপোর্টের প্রায় ১০ জন কর্মকর্তা বরখাস্ত হলেও জোনাইদের (Junaid Mollah) শখ পূরণ হয়েছে। তার শখ পূরণ করেছে ওয়ালটন প্লাজা। জোনাইদের বাবা ওয়ালটনের গ্রাহক। ওয়ালটন প্লাজায় ‘কিস্তি সুরক্ষা পলিসি’ থেকে গ্রাহকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। ওয়ালটন প্লাজার কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শিশুটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে উড়োজাহাজে ওঠার পর গণমাধ্যমে বিষয়টি জানতে শিশুটি উড়োজাহাজের চালক (পাইলট) হতে চায়, তাই তাঁরা তাকে উড়োজাহাজে চড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তারই ধারাবাহিকতায় জোনাইদ ও তার চাচা ইউসুফ মোল্লাকে ওয়ালটন প্লাজার পক্ষ থেকে ঢাকা-কক্সবাজার বিমানে ভ্রমণ ও হোটেল ‘ওশান প্যারাডাইসে’ থাকা খাওয়া ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘোরার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
ধন্যবাদ ওয়ালটন প্লাজাকে এমন সুন্দর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য
প্রশ্ন: সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানে চড়া শিশুর নাম কি ?
উত্তর: মো: জোনাইদ মোল্লা
প্রশ্ন: সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানে চড়া শিশুর বাড়ি কোথায় ?
উত্তর: গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামে।
প্রশ্ন: জোনাইদের পিতার নাম কি ?
উত্তর: মো: ইমরান মোল্লা
প্রশ্ন: জোনাইদের চাচার নাম কি ?
উত্তর: মো: ইউসুফ মোল্লা