বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত বিষয় হল বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন। এ বিষয়ে উপরের দুটি প্রশ্ন একবার হলেও কারো না কারো মাথায় এসেছে হয়ত। অনেকে এর উত্তরও হয়ত খুঁজেছেন। কিন্তু সময় না পাওয়ায় হয়ত ঘেঁটে দেখতে পারে নাই। চলুন দেখে নিন উত্তরসমূহ:

সূচী:
১। প্রশ্ন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু ১৯৪১ সালে আর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে। তাহলে রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশ নিয়ে কিভাবে জাতীয় সঙ্গীত লিখলেন?
উত্তর:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে আমার সোনার বাংলা গানটি লিখেছিলেন। যা বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে লিখেছিলেন। যারা বঙ্গভঙ্গ বোঝেন না তাদের জন্য: বঙ্গভঙ্গ মানে হল ব্রিটিশ আমলে তৎকালীন বঙ্গ/বাংলা বা ভাষাভাষী লোক বসবাসরত যে বিশাল অংশ তা ব্রিটিশদের পক্ষে শাসন করা দূরুহ হয়ে পড়েছিল। তাই ব্রিটিশরা বঙ্গভঙ্গ করে বা বাংলাকে দুভাগ করে।
একটা করে পূর্ব বাংলা, অন্যটি পশ্চিম বাংলা। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতে ব্যথিত হন। সংস্কৃতিগত ভাবে বাংলার মাঝে সীমানা প্রাচীর উঠবে এটা উনি চাননি। এর কারণ সংস্কৃতিগত বা তার জমিদারীগত হতে পারে।
এই বঙ্গভঙ্গের জন্য ব্যথার প্রকাশ ঘটে তার “আমার সোনার বাংলা” গানে। সেখানে তিনি সমস্ত বাংলার রূপ বৈচিত্র, সৌন্দর্য তুলে ধরেন সাথে বাংলা/বঙ্গ ভুমিকে “মা” সম্বোধন করেন। তিনি এটা বোঝাতে চান, যে বাংলা/বঙ্গ ভূমি যদি আমাদের মা হয়, আমরা তার সন্তান। বঙ্গভঙ্গ হল মাকে ভাগ করা, মায়ের বুকের উপরে সীমানা প্রাচীর তোলার সমান।
আরো পড়ুন:
- তাইজুল ইসলাম: একজন প্রতিভাবান বাংলাদেশী ক্রিকেটার
- ইসকনের চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু: হিন্দু জাগরণ ও আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত
- ঢামেকের ভুয়া চিকিৎসক পাপিয়া আক্তার স্বর্ণা: এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা । papia akter sorna 2024
- বৈভব সূর্যবংশী: ভারতীয় ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা । Vaibhav Suryavanshi Rising star of Indian cricket
- নিঝুম মজুমদার-হারপিক মজুমদার কে ? কেন তাকে এই নামে ডাকা হয় ? Why is Nijhoom Majumder called Harpik Majumdar 2024?
২। জাতীয় সঙ্গীতের মা শব্দটি কালী/দূর্গা কিনা?
উত্তর:
এখানে মা মানে কখনই মা কালী/দূর্গা নয়। কারণ গানে উল্লিখিত-
“ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে
ওমা অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে কি দেখেছি, মধুর হাসি।”
গোটা গান বাদে যদি এতটুকুরও অর্থ বুঝতে চাই দেখা যাচ্ছে- যখন আম পাকে, পাকা আমের গন্ধে কবির মন পাগল হয়। অঘ্রাণ মাসের ক্ষেত ভরা ধান দেখে, ধানের মিষ্টি গন্ধে কবির মন ব্যকুল হয়। এখানে মা কালী/দূর্গা কৈ? তাদের নিয়ে লিখা রবীন্দ্রনাথের অজস্র গান আছে। বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষিতে তার কালী/দূর্গা ভক্তি জাগ্রত হয়নি। হলে তিনি শ্যামা বা দূর্গাকে নিয়ে প্রার্থনা সঙ্গীত লিখতেন।
অন্যভাবে বলতে গেলে যখন আমরা আমাদের জন্মদেওয়া মা বাদে খালাম্মা, চাচিআম্মা, ফফু আম্মা, বড়আম্মা বা কাকিমা, বড়মা, মাসিমা, পিসিমা দের সাথে মা শব্দটি লাগাই তাদেরকে আমরা আপন মায়ের চোখে দেখি, এতে তাদের সাথে আমাদের আত্মিক বন্ধন আরো দৃঢ় হয়।
তেমনি বাংলাভূমিকে যখন মা ভাবা হয় তখন তার সাথে আমাদের আত্মিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।
তাহলে এটাও পরিস্কার তিনি বাংলাদেশ কে নিয়ে এই গান লিখেন নি, তিনি লিখেছিলেন পুরো বাংলা/বঙ্গ ভূমিকে নিয়ে। কারণ তখনও বাংলাদেশ নামক কোন ভূখন্ডের জন্ম হয়নি।
পরবর্তীতে যখন বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় তার সতন্ত্র বহুকিছুর প্রয়োজন পড়ে। যার মধ্যে জাতীয় সঙ্গীত একটি।
উপসংহার:
বাংলাদেশের তৎকালীন নীতি নির্ধারকগণ তখন জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখা “আমার সোনার বাংলা” গানটির প্রথম ১০ লাইন জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করেন। কারণ, বাংলাদেশ শব্দের প্রথমে আছে বাংলা, আর এই গানে বাংলার যে রূপ বর্ণিত হয়েছে তা বাংলাদেশ এর ঋতুবৈচিত্র ও সৌন্দর্যের সাথে পুরোপুরি মিলে যায় বা সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রশ্ন: জাতীয় সঙ্গীতের মা শব্দটি কালী/দূর্গা কিনা?
উত্তর: উপরে দেখে নিন
প্রশ্ন: জাতীয় সঙ্গীতের মা শব্দটি কালী/দূর্গা কিনা?
উত্তর: উপরে দেখে নিন