ফ্রিল্যান্সিং কি, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো, কি শিখব, কতদিন সময় লাগবে, এটি ফুলটাইম নাকি পার্টটাইম, freelancing, freelance, outsourcing, marketplace, skill, কিভাবে স্কিল নির্ধারণ করবেন,
সূচী:
ফ্রিল্যান্সিং কি
বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ ফ্রিল্যান্সিং। সাধারণত এটি মানে আমরা বুঝি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করা। কিন্তু আসলে ফ্রিল্যান্সিং মানে কিন্তু শুধু ইন্টারনেটে কাজ করা ? আসলে তা না । মূলত কারো অধীনে স্বল্পমেয়াদে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলা যায়। ধরুন আপনি একটি স্কিল জানেন। সেটা হতে পারে কৃষিকাজ বা অন্য কোন কাজ। আপনি যখন বিভিন্ন লোকের সাথে বিভিন্ন মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ হয়ে একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করেন তাই আসলে ফ্রিল্যান্সিং। যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন তাদের বলে ফ্রিল্যান্সার। ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে আরেকটা শব্দ যুক্ত হয় তার নাম আউটসোর্সিং। অনেকে ভেবে থাকেন এ শব্দ দুটো একই। কিন্তু আসলে যিনি চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করেন তিনি ফ্রিল্যান্সার আর যিনি কাজ করিয়ে নেন তিনি আউটসোর্স করেন। অর্থাৎ আমি যদি আপনাকে কোন কাজ দিই সেটা আমি আপনাকে দিয়ে আউটসোর্স করাচ্ছি আর আপনি করছেন মানে আপনি ফ্রিল্যান্স করছেন। বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। উন্নত দেশে বর্তমানে কম্পিউটার বিষয়ক অনেক কাজের রেট বেশি। ধরুন একটি ওয়েবসাইট বানাতে আমেরিকায় ৫০০ ডলার লাগে। কিন্তু অন্য দেশে ঐ একই কাজ ১৫০ ডলারে কেও করে দেয়। তখন উন্নত দেশের লোকেরা যেসব দেশে কম দামে মানুষ কাজ করে তাদের সাথে চুক্তি করে কাজটি করিয়ে নেয়। এই কাজ করিয়ে নেওয়াটা আউটসোর্সিং আর যারা কাজ করে দিচ্ছে তারা ফ্রিল্যান্স করছে।
মার্কেটপ্লেস:
আউটসোর্স ও ফ্রিল্যান্স এ দুটোর মধ্যে আরেকটা বিষয় আসে আর তা হল মার্কেটপ্লেস। মার্কেটপ্লেস হল সেই জায়গা যেখানে আউটসোর্সার ও ফ্রিল্যান্সার একে অপরের দেখা পায়। যোগাযোগ করতে পারে। অর্থের বিনিময় করতে পারে। ধরুন আপনি ওয়েবসাইট বানাতে পারেন। এ বিষয়টা আমেরিকার লোক কিভাবে জানবে ? বা আমেরিকার একটা লোক ওয়েবসাইট বানাবে সেটা আপনিই বা কিকরে জানবেন তাইনা ? আবার আপনি যে লোকটার থেকে কাজের বিনিময়ে টাকা নিবেন সেটা কিভাবে নিবেন ? বা আপনি যে লোকটার কাজ ঠিকভাবে করে দিবেন কিনা সে গ্যারান্টি সে কিভাবে পাবে ? এসব প্রশ্নেরই উত্তর দেয় মার্কেটপ্লেস। এটি হল বাজারের মত। যেখানে আপনি আপনার প্রয়োজনমত দোকান খুঁজে নিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় পণ্য কেনেন। মার্কেটপ্লেসে যারা কাজ দেয় তাদের বলা হয় বায়ার বা ক্রেতা। আর যারা কাজ করে তাদের বলে সেলার বা বিক্রেতা। দুপক্ষেরই এখানে একাউন্ট থাকে। এখানে সবাই প্রয়োজনমত সবাইকে খুঁজে নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হতে পারে। মার্কেটপ্লেস সেলারের থেকে কাজ বুঝে নেয় ও বায়ারের থেকে অর্থ বুঝে নিয়ে সেলারকে প্রদান করে ও নিজে কিছু কমিশন কেটে রাখে। যা মার্কেটপ্লেসের ইনকাম। বহুল প্রচলিত কিছু মার্কেটপ্লেস লিংক..
ফাইভার, আপওয়ার্ক, পিপলস পার আওয়ার, ফ্রিল্যান্সার
ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায়:
ফ্রিল্যান্সিং শেখার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। বিভিন্ন ট্রেনিং ইন্সটিটিউট থেকে শেখা যেতে পারে। কোন বড়ভাই/বোনের থেকে শেখা যেতে পারে। আবার গুগোল ও ইউটিউব থেকেও শেখা যেতে পারে। যারা নতুন শিখতে আসে তাদের মুলত শেখার পেছনে সেভাবে অর্থ ব্যয় করার ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ নতুন শিক্ষার্থী গুগোল ও ইউটিউবকেই শেখার জায়গা হিসেবে বেছে নেন। গুগোল ও ইউটিউবে বিভিন্ন স্কিলের উপর টিউটোরিয়াল থাকে। যা দেখে ও পড়ে শেখা সম্ভব।
আরো পড়ুন
- বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের জীবনী- সফলতা, অবদান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা । Biography of Bangladesh Football Federation (BAFF) President Tabith Awal 2024
- রয়েল এনফিল্ড বাইক বাংলাদেশ বিস্তারিত । royal enfield bike bangladesh details 2024
- তাপসী তাবাসসুম উর্মি । tapashee tabassum urmi । কে ? রাজনৈতিক পরিচয়? ঠিকানা? মোবাইল নং ? ইমেইল ?
- রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশ নিয়ে কিভাবে জাতীয় সঙ্গীত লিখলেন? জাতীয় সঙ্গীতের মা শব্দটি কালী/দূর্গা কিনা? How did Rabindranath write the national anthem of Bangladesh? Is the word maa means Kali/Durga of the national anthem?
- কি মোবাইল কিনবো ? 2024 সালে মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার ?
কোন স্কিল শিখবেন:
ফ্রিল্যান্সিং শেখার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল এটি। যার উত্তর পাওয়া খুব কঠিন। যার উত্তর কেও আপনাকে বলে দেয়না। যা আপনাকে খুঁজে নিতে জানতে হবে। বিশ্বের বহু মানুষ বহু কাজ করিয়ে নিচ্ছেন বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে। যার মধ্যে কঠিন, সহজ দুই স্কিলই আছে। ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হতে গেলে আপনাকে নিজের জন্য যোগ্য ও বাজারে কাজ আছে এমন স্কিল খুঁজে নিয়ে সেটা শিখতে শুরু করতে হবে। এমন একটি ফিল্ড খুঁজে বের করতে হবে যেখানে লোকজন কম, বাজারে সে কাজের দাম আছে ও যা শেখা মোটামুটি সহজ। কারণ কোন স্কিল শিখতে যদি বেশিদিন লাগে তাহলে সে স্কিল মার্কেটআউট হবার সম্ভাবনা থাকে। তখন আর সেটাতে কাজ পাওয়া যায়না।
কিভাবে স্কিল নির্ধারণ করবেন ও শিখবেন:
এক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসই আপনাকে সাহায্য করবে । আপনার কাজ হবে যেকোন একটি মার্কেটপ্লেস রিসার্চ করা। কিভাবে রিসার্চ করবেন তাইতো ? ধরুন আপনি ফাইভার.কম এ কাজ করবেন। আপনাকে আগে মার্কেটপ্লেসে গিয়ে দেখতে হবে কোন বিষয়ে মানুষ কাজ বেশি করছে ? কোন কাজটি বায়ার বেশি করিয়ে নিচ্ছে। প্রত্যেক মার্কেটপ্লেসে কাজের ক্যাটাগরি থাকে। আপনাকে সময় নিয়ে একটি একটি করে ক্যাটাগরি দেখে দেখে, সেখানে কেমন কাজ পাচ্ছে সবাই তা দেখে, সে স্কিলটি আপনি শিখতে পারবেন কিনা তা নির্ধারণ করে তবেই শিখতে শুরু করা উচিত। একটি স্কিল নির্ধারণ করে সে স্কিলে এক্সপার্ট না হওয়া পর্যন্ত কাজে আসা উচিত না। এক্সপার্ট হয়েছেন তখনই বুঝবেন যখন আপনি ঐ বিষয়ক কোন সমস্যা কম্পিউটারে না বসেই একরকম মুখস্ত সমাধান বলতে পারবেন। আপনার চোখের সামনে ভাসবে, কোন সমস্যার কি সমাধান হবে।
ফ্রিল্যান্সিং কি পার্টটাইম নাকি ফুলটাইম:
বর্তমানে সবথেকে প্রতিযোগিতার স্খান হল মার্কেটপ্লেস বা ফ্রিল্যান্সিং জগত। পূর্বে এ জগতে এত লোক ছিলনা। কিন্তু করোনা মহামারীর পরে এ জগতে লোকের সংখ্যা অগনিত। তাই প্রতিযোগিতাও বেশি। একটা সময় ফ্রিল্যান্সিং পার্টটাইম হিসেবে করা যেত। কিন্তু বর্তমানে একটি কাজের পাশাপাশি এ কাজটি করা প্রায় অসম্ভব। অর্থাৎ এটা এখন ফুলটাইম কাজ। কারণ পূর্বে যখন কেও মার্কেটপ্লেসে যুক্ত হত তখন সার্চ করে তার নাম থাকতো ১০ জনের ভেতর যা বর্তমানে ১০০০ জনে দাঁড়িয়েছে। এই ১০০০ জনের মধ্যে তারাই আগে থাকে যারা পূর্বে অনেক কাজ করেছে, অভিজ্ঞ, যারা সবসময় অনলাইনে থাকে, যারা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করে, যারা এটাকে ব্যবসা হিসেবে করে ও যারা মার্কেটপ্লেসে অনেক টাকার বিনিময়ে বিজ্ঞাপণ দিয়ে থাকে। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে নতুনেরা কি কাজ পায় না ? পায় তারাও পায়। তবে অল্প পরিমাণে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। অনেক বায়ার থাকে যারা অল্প রেটের জন্য নতুন সেলার খোঁজে। তবে বেশিরভাগ বায়ারের প্রথম পছন্দ থাকে যারা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সেলার।
সফল হতে কত সময় লাগতে পারে:
এ প্রশ্নের কোন বাধাধরা উত্তর নেই। আপনি যদি সঠিক স্কিল নির্বাচন করতে পারেন, এক্সপার্ট হন, আপনার ভাগ্য যদি সুপ্রসন্ন হয় তাহলে খুব বেশি সময় লাগবেনা। তবুও ৩-৫ বছর লেগেই যাবে আপনার খেয়েপরে বাাঁচার মত ইনকাম করতে। মানে আপনাকে আর কোন কাজ না করে শুধু ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করতে। যদি ধৈর্য নিয়ে লেগে থাকেন, আপনার স্কিল নির্বাচন যদি সঠিক হয়, কেও যদি আপনাকে প্রত্যক্ষ সাহায্য করে, আপনার যদি ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় তবেই সফলতা আসবে। নতুবা ঝরে পড়তে হবে। কথাগুলোর সাথে অনেকে একমত হবেন না এটা স্বাভাবিক। অনেকের হয়ত ব্লগ পড়ে মন খারাপ হয়ে যেতে পারে। তবে বাস্তবতা এটাই।
আপনার মনে যদি আরো কোন প্রশ্ন থাকে আমাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: ট্রেনিং সেন্টার থেকে শেখা কি ঠিক হবে ?
উত্তর: যদি দেখেন সেখান থেকে শিখে আপনার কাছের বা পরিচিত কেও ইনকাম করছে তাহলে শিখুন, শেখা ঠিক হবে।
প্রশ্ন: কিভাবে শিখলে দ্রুত ইনকাম হবে ?
উত্তর: নিজের পরিচিত কেও, যিনি সরাসরি আপনাকে শিখতে সাহায্য করবেন। তার অধীনে শিখলে জলদি ইনকাম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
প্রশ্ন: ফ্রিল্যান্সিং শেখার পূর্বশর্ত কি?
উত্তর: নিজেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখব বলে উৎসর্গ করা। যেকোন সমস্যায় গুগোল/ইউটিউবে নিজে নিজে সমাধান খোঁজা। ফ্রিল্যান্সিংকে ফুলটাইম নেওয়া। ধৈর্য ধরে লেগে থাকা। সৎ থাকা।